৪৪ বিলিয়ন ডলার: মার্কিন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভূমিকা

 ৪৪ বিলিয়ন ডলার: মার্কিন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভূমিকা

টিউশন ফি এবং আবাসন থেকে শুরু করে চাকরি সৃষ্টি ও স্থানীয় ব্যবসার উন্নয়ন—ছাত্র ভিসার সীমাবদ্ধতা আমেরিকার জন্য লাভের চেয়ে ক্ষতির কারণ হতে পারে।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা কেবল একটি দেশের একাডেমিক পরিবেশকে সমৃদ্ধ করে না, বরং তারা অর্থনীতিতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত, তাই এই দেশটি এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তবে সাম্প্রতিক নীতিগত পরিবর্তন—বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের সময়—নতুন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা পাওয়াকে জটিল করে তুলেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সুবিধা বিপন্ন করছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক প্রভাব

NAFSA: Association of International Educators-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে ১১ লাখের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেছে, যারা মার্কিন অর্থনীতিতে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলার অবদান রেখেছে। রাজ্যভিত্তিক এই অবদান অনেক ভিন্ন রকম:

ক্যালিফোর্নিয়া: ১,৪১,০০০ শিক্ষার্থী → $৬.৪ বিলিয়ন

ম্যাসাচুসেটস: ৮২,০০০ শিক্ষার্থী → $৩.৯ বিলিয়ন

টেক্সাস: ৯০,০০০ শিক্ষার্থী → $২.৫ বিলিয়ন

আলাস্কা: $১০ মিলিয়নের বেশি

এই শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র টিউশন ফি প্রদান করে না, তারা বাসা ভাড়া করে, রেস্টুরেন্টে খাবার খায়, কেনাকাটা করে, ভ্রমণ করে এবং বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে—যার ফলে তাদের অর্থনৈতিক প্রভাব সমাজের বিভিন্ন খাতে ছড়িয়ে পড়ে।

চাকরি সৃষ্টি ও কর্মসংস্থানের প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৩,৭৮,০০০-র বেশি চাকরি সরাসরি ও পরোক্ষভাবে সমর্থন করে। এর কয়েকটি উদাহরণ:

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ ও প্রশাসনিক কর্মচারী নিয়োগ

স্থানীয় রেস্টুরেন্ট, দোকান, ক্যাফে ইত্যাদিতে অতিরিক্ত শ্রমিক প্রয়োজন

আবাসন, পরিবহন ও হসপিটালিটি পরিষেবার চাহিদা বৃদ্ধি

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের অধ্যাপক নিকোলাস ব্যার বলেন, “শিক্ষার্থীরা শুধু টিউশন দেয় না। তারা বাসাভাড়া দেয়, বাইরে খাওয়া-দাওয়া করে, ভ্রমণ করে—এই সবই স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে।”

নীতিগত পরিবর্তন ও সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি

ট্রাম্প প্রশাসন কঠোর ভিসা নীতি কার্যকর করেছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর নতুন বিধিনিষেধ আরোপের চেষ্টা করেছিল। এর ফলে নতুন আন্তর্জাতিক ছাত্রদের ভিসা প্রদান সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছিল—এমন একটি সিদ্ধান্ত যা অর্থনীতিবিদদের মতে দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে:

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক চাপ বৃদ্ধি

কোর্স বা প্রোগ্রামের সংখ্যা হ্রাস

স্কলারশিপ ও আর্থিক সহায়তা কমে যাওয়া

রিয়েল এস্টেট ও স্থানীয় ব্যবসার আয় হ্রাস

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কনস্টান্টিন ইয়ানেলিস বলেন, “ছাত্র ভিসা বন্ধ করে দিলে আবাসন, রেস্টুরেন্ট ও ভোক্তাভিত্তিক ব্যবসার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।”

দেশীয় শিক্ষার্থীরা কি এই ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম হবে?

অনেকে মনে করেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমে গেলে দেশীয় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়িয়ে এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। কিন্তু এটি একটি কার্যকর সমাধান নয়। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সাধারণত দেশীয় শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনেক বেশি টিউশন ফি প্রদান করে, কারণ মার্কিন নাগরিকরা ইন-স্টেট রেট এবং আর্থিক সহায়তার সুবিধা পেয়ে থাকে। তাই তাদের অনুপস্থিতিতে যে আর্থিক ঘাটতি সৃষ্টি হয়, তা সহজে পূরণ করা সম্ভব নয়।

কেন এটি স্থানীয় অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ

যেসব রাজ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়। এর ফলে উন্নতি ঘটে:

আবাসন খাতের (বাসাভাড়া ও জীবনযাত্রার ব্যয়)

হসপিটালিটি ও খুচরা খাতের

পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ও পর্যটনের

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়ন ও গবেষণা অনুদানের

এই আর্থিক কার্যক্রমের অভাব হলে, স্থানীয় মুদি দোকান থেকে শুরু করে সিনেমা হল পর্যন্ত অনেক ব্যবসা ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

উপসংহার

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র একাডেমিক ক্ষেত্রের অংশ নয়—তারা মার্কিন অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। নীতিনির্ধারকদের উচিত ভিসা সীমাবদ্ধতা আরোপের আগে তাদের সামগ্রিক প্রভাব বিবেচনা করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল, চাকরি সৃষ্টি, স্থানীয় ব্যবসা—সব ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

Read in English